অনলাইন ডেস্ক নিউজ ::
যশোর জেলার এনএটিপি-২ লিফ ঐক্য কল্যাণ পরিষদের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ২০২১ইং সম্পন্ন
বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন ছিলো।
এদিনে বর্বর পাকিস্তানিরা নিরীহ নিরাস্ত্র বাঙালির ওপর অমানবিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্বরোচিত গণহত্যা চালানোর ভয়াল স্মৃতির কালো রাত এই ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালের এই রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে রচিত হয়েছিল বিশ্বে নৃসংস এক কালো অধ্যায়।
এদিন পাকিস্তানি নরপিশাচরা পরিকল্পিতভাবে কুখ্যাত অপারেশন সার্চলাইটের নামে মুক্তি কামি বাঙালির কন্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ভিন্ন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন শুরু হয় এই রাতে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালে এই গণহত্যার দিনটিকে জাতীয় গণ হত্যা দিবস হিসেবে স্মরণ করে আসছে জাতি।
১৯৭১এর এই দিনটিতে ও সারাদেশের মানুষ ছিল স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত। এর আগেই সরওয়ার্দী উদ্যানে তখনকার রেসকোর্স ময়দান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনেই মানুষ বুঝে গিয়েছিল স্বাধীনতা আসন্ন।
তখন বাঙালি জাতি স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় বাস্তবায়নের জন্য নামতে হবে সশস্ত্র সংগ্রামে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তখন ঢাকায় ঠিক ২৫শে মার্চ তিনি ঢাকা ছেড়ে চলে যান করাচিতে। তখনো বাঙালি সহ বিশ্ববাসী ধারণাও করতে পারেনি এক গণহত্যার নীল নকশা চূড়ান্ত করে তিনি ছেড়েছেন ঢাকার মাটি।
২৫শে মার্চের সেই রাতের ঢাকা বাসি নিরীহ বাঙালির সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঠিক সেই সময়ই ভয়ংকর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী হিংস্র সাপদের মতো জলপাই রংয়ের ট্যাংক গুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ইপিআর ব্যারাকে দিকে যেতে থাকে রচিত হয় এক কুখ্যাত ইতিহাস ।
২৫ শে মার্চ রাতে সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্রাক বোঝাই করে নর ঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তানের সৈন্যরা ট্যাঙ্ক সহ আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে পরে শহরজুড়ে। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে ওঠে আধুনিক রাইফেল মেশিনগান ও মোর্টার গুলিতে বর্বরোচিত নৃশংস আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডবে তখন মত্ত পাকিস্তানি বাহিনী।
হতচকৃত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়তে থাকে মৃত্যুর কোলে।
ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় নীলক্ষেত সহ বিভিন্ন স্থানে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাশের পর লাশ মধ্যরাতের ঢাকা তখন লাশের শহর। এমনভাবে নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষদের উপর চালানো এ হত্যাযজ্ঞে স্তম্ভিত বিশ্ব বিবেক।
আর সে রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা গণমাধ্যম ও রেহাই পায়নি জল্লাদদের এ পরিকল্পনা থেকে অগ্নিসংযোগ মর্টারসেল ছুড়ে একে একে দৈনিক ইত্তেফাক দৈনিক সংবাদ ও জাতীয় প্রেসক্লাব ধ্বংসস্তপে পরিণত করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। জীবন দিতে হয় বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীকে। তারমধ্য ডাক্টর গোবিন্দ চন্দ্র দেব ডক্টর জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য মনিরুজ্জামান সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় শিক্ষককে হত্যা করা হয় নিষ্ঠুরভাবে। ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাঙালির মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে অন্তরেই ধ্বংস করতে চালানো হয়েছে এই সশস্ত্র কাপুরুষোচিত অভিযান।
সে রাতে শোয়া একটার দিকে একদল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে তখন বঙ্গবন্ধু বীরের মতো দোতলার ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ান রাত ১ টা ২৫ মিনিটের দিকে এবার টেলিফোনের লাইন কেটে দেওয়া হয় বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নষ্ট করে দিতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পাক হায়েনার দল। এর আগেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহারে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআর এর ওয়ারলেস এর মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন।
এই ওয়ারলেস বার্তা পৌঁছে যায় চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দপ্তরে চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙ্গর করা একটি বিদেশী জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে তখন চট্টগ্রামের অবস্থানরত আওয়ামী লীগের তৎকালীন শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সেই রাতে সাইক্লোস্টাইল করে শহর বাশির মধ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়।
২৫ মার্চের ভয়াল সেই রাতে কত বাঙালিকে প্রাণ দিতে হয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।
তবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং এর পত্রিকার ভাষ্য কেবল ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।
খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও কিছু তথ্য পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তারা যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল তাতে বলা হয় ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবন অবসান হয়েছিল।
একাত্তরের এই গণহত্যা দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে এ উপলক্ষে আজ রাত ১০ টা ৩০ থেকে ১০ টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতিটি ব্ল্যাকআউট পালন করা হবে । তাছাড়া দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন।
সাথে খুলনা আওয়ামী লীগ নানান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আআওয়ামী লীগ ২৫ মার্চ শনিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে রাজনৈতিক দল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গণহত্যা দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল দশটায় অদম্য বাংলার
পাদ দেশে প্রদর্শনী উদ্বোধন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলায়তনে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী সকাল সাড়ে দশটায় গণহত্যা নির্যাতন বিষয়ক স্থাপনশিল্পের উদ্বোধন এ ছাড়া রাত নটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষ্প্রদীপকরণ।এছাড়া খুলনার বিভিন্ন রাজনৈতিক অরাজনৈতিক সংগঠন গুলো যথাযথ মর্যাদার সাথে দিবসটি পলন করছে।