শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি।।
স্বামীকে হত্যা করে প্রেমিকের সঙ্গে একই ঘরে
শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট ইউনিয়নের সিন্দুরখান বাজার সংলগ্ন জয় বাংলা বধ্যভূমিতে শতাধিক চা শ্রমিক একত্রে দখলে আসেন। সিন্দুরখান ও রাজঘাট চা বাগানের ভুমিহীন চা শ্রমিক এর নামে বধ্যভূমিতে একটি ভেনার টাঙ্গান হয়।
আজ ২৪শে জানুয়ারী সোমবার বধ্যভূমির জমি দখলের সংবাদ পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশসহ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ নেছার উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আপত্তি দিলে কিছুক্ষনের জন্য তারা কাজ বন্ধ রাখে। পরে প্রশাসন লোকরা চলে আসলে দুপুর থেকে তারা আবারও তা দখলে যায়।
তবে সরজমিনে দেখা যায় যে, জয় বাংলা বধ্যভূমিতে ঘর নির্মানের জন্য তারা এর মাটির নিচ থেকে বাঁশের মোড়া বা শেকড় উত্তোলন করছে। অনেকে অন্যপাশ থেকে মাটি এনে ভিটা তৈরীর কাজ করছে। কেউ আবার ঘর তৈরীর জন্য বাঁশ কাটছেন।
এ বিষয়ে সিন্দুরখান চা বাগানের লিটন নায়েক জানান যে, এটি চা বাগানের জমি এখানে বাঁশ বরন্ডি ছিলো। আমাদের বাসস্থানের সংকট তাই আমরা এই জায়গায় আমাদের বাসস্থান তৈরী করছি।
সিন্দুরখান চা বগানের সরদার পরিতোষ বুনার্জী জানান যে, বাগান কর্তপক্ষকে বার বার বলার পরও তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতেছেনা। বাগানে এক ঘরে বাবা-মা, নিজে নিজের স্ত্রী ভাই-ভায়ের স্ত্রী, ছেলে-ছেলের স্ত্রীসহ বসবাস করছেন। নিরুপায় হয়ে বাগানের মানুষ এই জায়গা দখল করে বাড়ী তৈরী করছেন।
এবিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কুমুদ রঞ্জন দেব জানান যে, খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। আপত্তি দেয়ার পরও তারা বধ্যভূমিতে কাজ করছে। প্রশাসনের বাঁধাও তারা মানেনি। তিনি জানান যে, বধ্যভূমিতে সরকারী অর্থায়নে স্মৃতিস্থম্ভ নির্মানের কাজ শরু হয়েছে। কোন একটি চক্র এর পেছনে রয়েছে। সাধারণ শ্রমিকদের দিয়ে এ চক্র বধ্যভূমির জমি দখল করাচ্ছে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিময় জায়গাটি রক্ষার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী।
তবে সিন্ধুরখানের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ রতিকান্ত রায় জানান যে, ১৯৭১ সালে এই জায়গাটি ছিলো বিশাল বাঁশ বরন্ডি। নির্জন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় এই জায়গাটিকে মুক্তিকামী ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার জন্য বেঁচে নেয় পাক-বাহিনী। তিনি জানান, পাক-বাহিনী ও দেশীয় রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের ধরে নিয়ে মুক্তিবাহিনীর তথ্য চাইতো। তথ্য না হলে বড় অফিসার বলতো এদের জয় বাংলামে বেঁচ দেও। অর্থাৎ জয়বাংলায় বিক্রি করে দাও। তখন এই বাঁশ বরন্ডিতে নিয়ে তাদের হত্যার পর ছোট ছোট গর্ত করে লাশ পুঁতে রাখতো। পরবর্তীতে এই বধ্যভূমির নামকরণ করা হয় জয়বাংলা বধ্যভূমি। স্থানীয় জন প্রতিনিধি রিপন রায় জানান, এই জায়গাটি আগেও ফিনলে টি কোম্পনী তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এখানে প্লান্টেশন করতে চেয়েছিলো। বুলডোজার চালিয়ে তখনই বাঁশ বরন্ডি, বাঁশঝাড় উপড়ে ফেলেছিলো।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা, মুক্তিযোদ্ধা ও গণমাধ্যমকর্মীদের চাপে তারা সেবার সরে যায়।
এবিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান যে, বাসস্থান সংকট হলে সেটা বাগান কর্তৃপক্ষ দেখবে। বধ্যভূমির জায়গা করো দখল করার সুযোগ নেই। এ ব্যপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।