1. mumin.2780@gmail.com : admin : Muminul Islam
  2. Amenulislam41@gmail.com : Amenul :
  3. smking63568@gmail.com : S.M Alamgir Hossain : S.M Alamgir Hossain
বিশ্বের আহমদ সিরাজ এর জয় - আলোরদেশ২৪

বিশ্বের আহমদ সিরাজ এর জয়

  • প্রকাশিত : বুধবার, ৮ জুন, ২০২২
  • ৫৭৪ বার দেখা হয়েছে

কমলগঞ্জে মনিপুরী ললিতকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হলো নটপালা উৎস

:: তৌহিদুর রহমান এর প্রতিবেদন ::

দ্রুতগতির গাড়িটা আঁকাবাঁকা পথের আরেকটা মোড় ঘুরতেই দেখি, অনেকগুলো মোটরসাইকেল দিয়ে রাস্তা আটকানো। একদল যুবক এলোমেলো দাঁড়িয়ে। গাড়িচালক ব্রেক কষতে বাধ্য হলেন। আমার মনে খটকা।

রাস্তাটা নির্জন বনের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু এই রাস্তায় ডাকাতি-ছিনতাই তো অতীত ইতিহাস। গাড়ি-ঘোড়া, যাত্রী সাধারণ, দেশি-বিদেশি পর্যটক দিনরাত যাতায়াত করছে নিরাপদে। তাহলে এরা কারা!

পেছনের সিট থেকে মোস্তাফিজ বলে উঠলেন, সিরাজ ভাই, আপনার ক্যাডার-সন্ত্রাসীরা ঘিরে ধরেছে। একটু কষ্ট করে নামেন। যুবকদল ততক্ষণে গাড়ির কাছে এসে পড়েছে। খেয়াল করে দেখি, অনেকের হাতে ফুলের তোড়া। মুখে বিজয়ের হাসি। চেহারায় উপচে পড়া উচ্ছ্বাস। ওরা ধরাধরি করে সিরাজ ভাইকে নামালেন। কার আগে কে ছোঁবে, ঠেলাঠেলি অবস্থা। পিছে পিছে আমরাও নামলাম। হাসি-আনন্দ-উল্লাসে মুখর বুনোপথ। ‘সিরাজ ভাই, এই সম্মাননা আমরার’, ‘এতদিন পর সিরাজ ভাইয়ের যোগ্য মূল্যায়ন’,’কমলগঞ্জ আজ ধন্য’, ‘আমরা আজ গর্বিত’- একেকজনের মুখে একেক আওয়াজ। সিরাজ ভাইয়ের হাতে ফুলের তোড়া দেওয়া, ছবি তোলা, ভিডিও করা- ফটোসেশনের ধুম। তারপর ‘সিরাজ ভাইয়ের বিশ্বজয়’ স্লোগান তুলে আমাদের গাড়িকে মোটরসাইকেলবহরে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে নিয়ে চলল স্থানীয় সাংবাদিকদের দলটি। কিছুদূর গিয়ে সোজা ঢোকানো হলো উপজেলা সদরের মুখেই পৌরসভা অফিসে। সেখানে নিয়ে আরেক কারবার। হই-হুলোড়, মিষ্টি খাওয়া-খাওয়ি, ভাববিনিময় শেষে তাৎক্ষণিক আয়োজনে হয়ে গেল একটা মিনি সংবর্ধনা পর্ব। গর্বে বুক ফুলিয়ে, আবেগে কেঁপে কেঁপে, উচ্ছ্বাসে চোখ ভিজিয়ে বক্তারা বইয়ে দিলেন শ্রদ্ধা-ভালোবাসার বন্যা। একজন তো রাস্তায় দেওয়া স্লোগানটাকে একদম উল্টে দিয়ে বোঝাতে চাইলেন, ‘কিসের সিরাজ ভাইয়ের বিশ্বজয়! এই ঘটনা আসলে ‘বিশ্বের আহমদ সিরাজজয়’। ব্যাখ্যাও দিলেন তিনি। সেসব পরে বলছি। আগে কী সেই স্লোগান-উল্টানো ঘটনা, প্রথম থেকে বলি :

দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডেইলি সান পত্রিকা, নিউজ টোয়েন্টিফোর ও টি স্পোর্টস টেলিভিশন, রেডিও ক্যাপিটাল এবং বাংলানিউজ অনলাইন পোর্টালসহ দেশের অন্যতম প্রধান গণমাধ্যমগোষ্ঠী ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ-এর স্বত্বাধিকারী দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ প্রথমবারের মতো প্রবর্তন করেছে ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’। এর প্রধান পর্ব ছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিতার প্রতিযোগিতা। শক্তিশালী বিচারকমণ্ডলীর মাধ্যমে সারা দেশের সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও অনলাইন মিডিয়া থেকে ৫টি ক্যাটাগরিতে অংশ নেওয়া প্রায় ৩০০ জন অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের মধ্য থেকে ১১ জনকে সেরা নির্বাচিত করে পুরস্কৃত করা হয়েছে। প্রত্যেক বিজয়ীকে দেওয়া হয়েছে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ইত্যাদির সঙ্গে আড়াই লাখ টাকা।

এই পুরস্কারের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপ একই মঞ্চে আয়োজন করেছে দেশের ৬৪ জেলা থেকে জীবনভর তৃণমূল সাংবাদিকতায় প্রাণপাত করা ৬৪ জন গুণী সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদানের এক মহতী উদ্যোগ। তাঁদেরও প্রত্যেককে ঢাকায় যাতায়াতের খরচ দিয়ে, তিন তারকা হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে মঞ্চে নিয়ে উত্তরীয় পরিয়ে ক্রেস্ট, সনদ, এক লাখ টাকার পে-অর্ডার উপহারসহ সম্মাননা দেওয়া হয়। এই অনন্য আয়োজনে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার গুণী সাংবাদিক হিসেবে নির্বাচন করা হয় আহমদ সিরাজ, সবার প্রিয় সিরাজ ভাইকে।

মৌলভীবাজার জেলায় আমি নবাগত। থাকি কমলগঞ্জ উপজেলায়, সিরাজ ভাইয়ের বাসস্থানের অনতিদূরেই। হয়তো এখানে আমি অনাহূত বহিরাগতর মতো। তবে প্রতিবেশীরা আমাকে ‘মেহমান’ সমাদরেই সহ্য করে আসছেন প্রায় আড়াই বছর ধরে। এখানকার মহান-মহৎ অনেক কিছুর মতো আহমদ সিরাজকেও চিনতাম না, জানতাম না। শুধু শুনতাম, একজন সাদা মনের আর বর্ণিল গুণের লেখাপাগল মানুষ এই সিরাজ ভাই। তাঁর কথা শোনার আগে আমার কমলগঞ্জবাসের প্রথম দিককার একটা ঘটনা। পদ্মছড়া চা বাগানের উত্তরে টিলাগাঁও গ্রামের একটা টিলায় উঠেছি প্রকৃতি দর্শনে। গ্রামবাসীর সঙ্গে আলাপচারিতার একপর্যায়ে একজন মুরুব্বি বললেন, ‘আমাদের সাংবাদিক সিরাজকে তো চেনেন। ‘ আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, ‘কোন সিরাজ?’ মুরুব্বি বললেন, ‘আহমদ সিরাজ! অনেক বড় সাংবাদিক। ‘ আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, ‘না ভাই, চিনি না যে!’ মুরব্বি বিস্মিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘সে কী! আপনি ঊনত্রিশ বছর ধরে সাংবাদিকতা করেন ঢাকায়; শুনছি, বড় বড় পত্রিকায় বড় বড় পদে চাকরি করছেন, আর আহমদ সিরাজকে চেনেন না?’

আমি যেন ধপাস করে পড়লাম টিলা থেকে। লজ্জায়, হতাশায় লাল, নীল, ফ্যাকাশে, অবশেষে কালোমুখ হয়ে বাসায় ফিরলাম। ঘরে বসে ভাবছি আর ভাবছি। হঠাৎ মনে পড়ল, অনেক বছর আগে, তখন কাজ করি প্রথম আলোয়। সারা দেশ ঘুরে ঘুরে লিখি। প্রথম দিকেই একবার এসেছিলাম সিলেট বিভাগ সফরে। তখন মৌলভীবাজারের প্রথম আলোর সাংবাদিক আকমল হোসেন নিপুর মুখে একবার শুনেছিলাম আহমদ সিরাজের কথা। পরে আর তাঁর কাছে যাওয়া হয়নি বলে হয়তো ভুলে গেছি।

ওই দিন লজ্জায় ‘টিলাপাতিত’ হওয়ার পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে সবিস্তারে জানলাম, শুনলাম আহমদ সিরাজ নামের মাহাত্ম্য। কমলগঞ্জের সাংবাদিকমহলে তিনি দেবতার আসনে। দলিত-অবহেলিত সম্পদায়ের কাছে দরদী বন্ধু। সাধারণের কাছে জীবন্ত কিংবদন্তি। গোটা জেলাবাসীই তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্ত।

এমন মানুষই তো খুঁজে বেড়িয়েছি জীবনভর। এমন সিরাজ ভাই-বোনদেরই তো সন্ধান করে ফিরেছি, লিখেছি, লিখতে চেয়েছি সংবাদপত্রের পাতায়। আর হাতের কাছে থাকা সেই মানুষের কথা এতদিন জানতেই পারিনি! ঠিক করলাম, দু-এক দিনের মধ্যেই দৌড়াব আহমদ সিরাজ-দর্শনে। কিন্তু কোত্থেকে এসে থামিয়ে দিল মড়ার করোনা। নিজেও একমসয় আক্রান্ত হয়ে পড়লাম। হয়ে গেলাম গৃহবন্দি। করোনা-প্রকোপ কমে এলেও আমি আর বেরোনোর সাহস পাই না, শক্তিও পাই না। সিরাজ ভাইয়ের কাছেও যাওয়া হয় না। একদিন মোস্তাফিজ এসে বললেন যে, সিরাজ ভাই নিজেই নাকি আমার বাসায় আসতে চান। আমি জিহ্বা কামড়ে বললাম, ‘সর্বনাশ! এটা কখনোই উচিত হবে না। এমন গুণী মানুষকে আমি আগে দেখতে যাব; তারপর আমিই তাঁকে নিয়ে আসব। ‘ কিন্তু অলসদের যা হয়, সেই যাওয়া আর হয়েই উঠল না। অবশেষে সুযোগ এনে দিল বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড। আহমদ সিরাজকে নির্বাচন করা হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার গুণী সাংবাদিক হিসেবে সম্মাননা প্রদানের জন্য। তাঁকে নিয়ে যেতে হবে ঢাকায়। বসুন্ধরার সঙ্গে আমিও একদিন যুক্ত ছিলাম। তাদের মিডিয়া গ্রুপের দৈনিক কালের কণ্ঠে দীর্ঘ সাড়ে ১০ বছর সাংবাদিকতা করেছি আমি। তার আগে আরো প্রায় সাড়ে ১০ বছর করেছি প্রথম আলোয়। আরো আগে ভোরের কাগজে। তারও আগে বাংলাবাজার পত্রিকায়। কিন্তু মহানগরীর নরকবাস আর অফিসাঙ্গনের দূষিত নিঃশ্বাস দিনে দিনে শেষ করে দিচ্ছিল আমাকে। মুক্তির জন্যে হন্যে হয়ে উঠেছিলাম আমি।

একটা শান্ত-স্বাধীন-নিরাভরণ জীবনের বিভোর স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ দিতে কত যে সাধনা করেছি! অবশেষে আজ থেকে প্রায় সোয়া দুই বছর আগে কালের কণ্ঠের যুগ্ম সম্পাদকের পদ পায়ে ঠেলে, রাজধানীর ‘রাজকীয়’ জীবন ত্যাগ করে, পাহাড়-টিলা-জঙ্গল আর চা বাগানের সবুজঘেরা স্নিগ্ধ-সুন্দর প্রকৃতির মাঝে গোটা পঁচিশেক নৃ-গোষ্ঠীর বিচিত্র সংস্কৃতিসমৃদ্ধ শান্তিপ্রিয় মানুষের জেলা মৌলভীবাজারের আরো শান্ত জনপদ কমলগঞ্জে চলে আসা এই অধমেরও ডাক পড়ল উভয় পক্ষ থেকে।

শেয়ার..

আরো সংবাদ পড়ুন...
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | আলোর দেশ ২৪ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Developed By Radwan Ahmed