মৌলভীবাজার প্রতিনিধি::
কমলগঞ্জের” ম্যারাথনে শাড়ি “পরে অংশ নেন অনসূয়া চক্রবর্তী
ভোরের ঘন কুয়াশা। মৌমৌলভীবাজারের আঁকা-বাঁকা চা-বাগানের পথ। সেই অচেনা পথ ধরে দৌড়াচ্ছেন সাড়ে ছয়শত দৌড়বিদ। কারও গন্তব্য ১০ কিলোমিটার আবার কারও ইচ্ছে ২১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া।
এবারের আয়োজনটা কিছুটা ভিন্ন ছিল।এবার ম্যারাথনকে উৎসর্গ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে। মৌলভীবাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা এবং ভারত, নেপালের অনেক দৌড়বিদ এই ম্যারাথনে অংশ নেন।
আজ শুক্রবার (১৮ই নভেম্বর) ভোরে মৌলভীবাজারে অনুষ্ঠিত হলো হাফ ম্যারাথন। মৌলভীবাজার সাইক্লিং সোসাইটি ও রানার্স ক্লাব তৃতীয় বারের মতো এই হাফ ম্যারাথনের আয়োজন করেছে। ভোর ৬টায় ম্যারাথন এর উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান। শহরের শ্রীমঙ্গল রোডের বেঙ্গল কনভেনশন হল থেকে শুরু হয় ম্যারাথন দৌড়।
আয়োজকরা জানান যে, করোনা পরবর্তী সময়ে অনেকের মধ্যে নানা রকম বিষণ্নতা তৈরি হয়েছে। অনেকের মধ্যে স্থবিরতা এসেছে। এ অবসাদ, স্থবিরতাকে ভেঙে আবার সবাইকে চাঙ্গা করে তোলাই এই ম্যারাথনের উদ্দেশ্য। এ জেলার সৌন্দর্য দেশ/বিদেশের পর্যটকদের সামনে তুলে ধরাও ম্যারাথনের অন্যতম একটা দিক।
এর সঙ্গে এবার যুক্ত করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সেই লক্ষ্যে এবার হাফ ম্যারাথনে মৌলভীবাজার জেলার ম্যাপের ভেতর বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধের ছবি সংবলিত টি-শার্ট ও মেডেল তৈরি করা হয়েছে। এই স্মৃতিসৌধটি রয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে। এছাড়াও ম্যারাথন উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে নিয়ে তথ্যচিত্র।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার রানার্স ক্লাব সূত্রে জানা যায় যে, গত ৪ঠা অক্টোবর থেকে ম্যারাথনে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়েছিল। গত ৭ই অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়েছে। এর নিবন্ধন ফি ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা।
আজ শুক্রবার (১৮ই নভেম্বর) ভোর ৬টায় শহরের শ্রীমঙ্গল সড়কের বেঙ্গল কনভেনশন হল থেকে দৌড় শুরু হয়। দুই রকম দূরত্বে দৌড় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর একটি ১০ কিলোমিটার দূরত্বের। এই দূরত্বের অংশগ্রহণকারীরা শহরতলির কমলগঞ্জ উপজেলার কালেঙ্গা বাজারের দক্ষিণ প্রান্ত ছুঁয়ে মৌলভীবাজার স্টেডিয়ামে ফিরেছেন।
তবে অপরটির দূরত্ব হবে ২১ দশমিক ১ কিলোমিটারের। এ দূরত্বের অংশগ্রহণকারীরা প্রেমনগর চা-বাগান থেকে মৌলভীবাজার স্টেডিয়ামে ফিরে আসেন। এ হাফ ম্যারাথনকে সুশৃঙ্খল, সুন্দর ও সফল করতে নিয়োজিত ছিলেন ১২০ জন স্বেচ্ছাসেবক। এক কিলোমিটার পর পর পানির বুথ, সড়কের বিভিন্ন মোড়ে দৌড়ের দিক-নির্দেশনা ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল।
তবে ম্যারাথনে অংশ নেওয়া নারী নওশিন জাহান বলেন যে, আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি প্রথমবার অংশগ্রহণ করে ১০ কিলোমিটার সম্পন্ন করতে পারব ভাবতেও পারিনি। অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করছে।
এসময়ে ইমন নামে আরোও এক ম্যারাথন বলেন যে, আমি প্রথমবারের মতো ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেছি। আমার খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এটা খুব বেশি প্রয়োজন।
এদিকে মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটির অ্যাডমিন আহমেদ বলেন, এবার হাফ ম্যারাথনের তৃতীয় আসর অনুষ্ঠিত হলো। আমরা এ আয়োজনে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। চার দিনেই সাড়ে ছয়শ রেজিস্ট্রেশন শেষ হয়ে গিয়েছিলে। ভবিষতে এই ম্যারাথনকে আরও বড় পরিসরে আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান বলেন যে, আমরা আশা করবো এভাবে যদি বড় বড় আয়োজন করা যায় তাহলে আমাদের এ জেলাকে তুলে ধরতে পারব। এখানে সারাদেশ থেকে মানুষ এসে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা এভাবে নিজেদের সুস্থ রাখব। আমরা আমাদের সমাজকে ভালো রাখার চেষ্টা করব সবসময়।