কমলগঞ্জ প্রতিনিধি::
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়াএ উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে চা বাগানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি ছড়া থেকে ও চায়ের টিলা খুঁড়েও প্রতিনিয়ত চলছে বালু বাণিজ্য। ফলে ছড়ার বাঁধ, কালভার্ট,চায়ের টিলা ও রাস্তাঘাট বিনষ্ট হচ্ছে।
বিপর্যস্ত হচ্ছে স্থানীয় পরিবেশ ও প্রতিবেশ। এতে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে গত ৮ইসেপ্টেম্বর মাধবপুর মৌজায় ধলাই নদীর ৩টি স্থানে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু ও বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহারিক সমাগ্রী ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডি.এম. সাদিক আল শাফিন জব্দ করেছে।
বিশেষ সুত্রে জানা যায় যে,বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ধলাই নদীর ৪টি স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ইজারা নেয়া হয়েছিল। ৪টি ঘাট ইজারা নিয়ে শাসক দলের কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করে নদীর প্রায় ৮/৯টি বাঁক থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করেছিল।
সে সময় প্রসাশন ঐসব অবৈধ বালু ঘাট বন্ধ করতে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি “অদৃশ্য শক্তির প্রভাবের”কারনে। ফলে অবৈধ ভাবে বালু বিক্রিকারীরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে উঠলে বন ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে ঐসব ঘাটের হাত বদল হয়েছে। হাত বদলে পাওয়া নতুন করে বালু উত্তোলনের কাজ শুরু করার পায়তারা করছেন।
এবিষয়ে আরও জানা যায় যে,২০১৩ সালের ১৮ই জুন এক প্রজ্ঞাপন দ্বারা মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত ৫১টি পাহাড়ি ছড়া সিলিকা বালু সম্পৃক্ত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে ১৯টি ছড়াকে অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়। তবে ইজারা গ্রহীতারা অনিয়ন্ত্রিত ও বেআইনিভাবে বালু উত্তোলন শুরু করলে ২০১৬ সালের ৮ই মার্চ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করে। পরে ২১শে মার্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ১৯টি বালুমহালকে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপন (ইআইএ) ও পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইসিসি) ছাড়া পরবর্তী ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। তবে উচ্চ আদালতের এসব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুনছড়া,কামারছড়া সহ চা বাগানের বিভিন্ন ছড়া থেকে বালু বাণিজ্য চলছে।
এবিষয়ে আরো জানা যায় যে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ছড়া থেকে সরকারি ইজারা ছাড়াই অবৈধ ভাবে উপজেলার সুনছড়া,দেওছড়া, কামারছড়া, লাউয়াছড়া, লঙ্গুছড়া,ধামালিছড়া সহ অসংখ্য স্থান থেকে অপরিকল্পিত ভাবে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে কয়েকটি স্থানে স্তুুপ করে রাখা হয়েছে। এসব বালু ট্রাক,হাতাগাড়ী যোগে অন্য স্থানে পরিবহন করছে।
এবিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন যে, মাঝে মধ্যে প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান করলেও এর স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছেনা। প্রশাসনের লোকেরা আসার আগেই ঐ চক্র পালিয়ে যায়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে পরিবেশর মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন যে,সুনছড়া থেকে ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন এখান থেকে ২০/২৫ হাজার টাকার সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। বালু উত্তোলনের কারণে পরিবেশ ও রাস্তার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
এবিষয়ে চা বাগানের ব্যবস্থাপক হাবিব আহমেদ চৌধুরী ইতিপূর্বে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তারপরও রোধ হয়নি সুনছড়ার অবৈধ বালু বাণিজ্য।
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ মেহেদী হাসান বলেন যে,পাহাড়ি ছড়ার চা বাগানের ভেতর থেকে অবৈধভাবে টিলা খুঁড়ে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য আলীনগর চা বাগান কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমম্বয়ক এড.শাহ সাহেদা আক্তার সম্প্রতি সুনছড়ায় বালু উত্তোলনকৃত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন যে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে যে হারে যত্রতত্র বালু উত্তোলন ও পরিবহন হচ্ছে তাতে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
এবিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন যে,অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখবো। সম্প্রতি ৩টি স্থানে বালু জদ্ধ করা হয়েছে। কাজের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ও দুর্গম এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।