আলোরদেশ২৪ নিউজ ডেস্ক।।
বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় দিন ফেব্রুয়ারীর (২৫ ও ২৬)শে তারিখ। ২০০৯ইং সালের এই দিনে দেশ হারিয়েছিল তার স্বর্ণ সেনাদের। পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে ঘটেছিল সেই নৃশংস ঘটনা।
আজ (২৫শে ফেব্রয়ারী) বৃহস্পতিবার পূর্ণ হলো পিলখানা বিদ্রোহ আর হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর।
এই দিনে বাংলাদেশ রাইফেলস বা তৎকালীন বিডিআরের জওয়ানরা (বর্তমানে বিজিবি) সশস্ত্র বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। নৃশংস এই ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো দেশ। আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে বিশ্ব জুড়ে।
২০০৯ইং সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারী। বুধবার সকাল ৯টা ২৭ মিনিট। পিলখানার ভেতর থেকে ভেসে আসে গুলি বর্ষনের শব্দ। প্রথমে সেখানে বসবাস করা অনেকেই ভেবেছিলেন নিয়মিত মহড়া। কিন্ত ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই জানা যায় বিদ্রোহের ঘটনা। এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক।
সেদিন বর্তমান বিজিবি সদর দফতরে ছিল বার্ষিক দরবার। দরবার চলাকালীন একদল বিদ্রোহী সৈনিক ঢুকে পড়ে। এদের একজন তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালকের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুখে লাল কাপড় বেঁধে, বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে জওয়ানরা ছড়িয়ে পড়ে পুরো পিলখানায়। তারা সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। চারটি প্রবেশ গেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশেপাশের এলাকায় গুলি ছুড়তে থাকে বিদ্রোহী সৈনিকরা। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়তে থাকে মেধাবী সেনা কর্মকর্তারা।
সেইদিন সকাল পৌনে ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর প্রথম আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ার বা এপিসি পৌঁছায় ধানমন্ডিতে। বিকেলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীসহ দুইজন সংসদ সদস্য শান্তির পতাকা নিয়ে পিলখানায় ঢোকেন। বিদ্রোহী সদস্যরা তাদের দাবির কথা জানাতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যান। চলে বৈঠক। রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র সমর্পন করে কিছু সদস্য। জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়ে আসেন কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। পরদিন রাতে রেডিও-টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে বিদ্রোহের পথ থেকে সরে আসার জন্য বিদ্রোহী সদস্যদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিদ্রোহী জওয়ানেরা অস্ত্র সমর্পণে সাড়া দেয়ার পর ২৭শে ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় পিলখানার ভেতরে ঢোকে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাসহ অন্যদের মরদেহ। পাওয়া যায় গণকবর। একটি রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর তিনটি দিন।
এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ১ জন সৈনিক, দুই জন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ জন বিডিআর সদস্য ও পাঁচ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। পিলখানায় এ বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়।
বিডিআরের নাম, পোশাক লোগো, সাংগঠনিক কাঠামো, পদোন্নতি ইত্যাদি ব্যাপারে পুনর্গঠন করা হয়। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিবর্তন করা হয় বিডিআর বিদ্রোহের আইন। বর্ডার গার্ড আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড।
বহুল আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় (পিলখানা হত্যা মামলা) ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতরা সবাই বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিডিআর) সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা হিসেবে পরিচিত।
২০২০ইং সালের ৮ই জানুয়ারী বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায় প্রদানকারী তিন বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার এ রায়টি প্রকাশ করা হয়।
রায়ের দৈর্ঘ্য এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ রায়।
সরকার বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাটিকে ‘পিলখানা হত্যা দিবস’ হিসেবে প্রতি বছর পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কোরআন খানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধিরা সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এ ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিজিবির মহাপরিচালক এবং নিহত কর্মকর্তাদের স্বজনরাও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সব সেক্টর, প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিটে বিজিবির পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবির সদস্যরা দিবসটি উপলক্ষে কালো ব্যাজ পরিধান করবে।