আমিনুল ইসলাম (হিমেল)
নিজস্ব প্রতিবেদন।।
বলিউড কাঁপানো অসংখ্য নায়িকা ভারতে জন্ম নয়
প্রাণপ্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে মহাবিপন্ন উল্লুকের অবাধ চলাচলের সুবিধার্থে বানানো হয়েছে পাঁচটি বন সেতু (ক্যানোপি ব্রিজ)। উদ্যানকে দ্বিখণ্ডিত করে চলে যাওয়া সড়ক ও রেলপথের দুই পাশের গাছের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এই সেতু। সড়কের দুই পাশের উঁচু দুটি গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে বানানো হয়েছে সেতুগুলো।
এই সেতু দিয়ে উল্লুকসহ অন্য সব বন্য প্রাণী সড়ক ও রেলপথের দুই পাশের বিস্তৃত উদ্যানে চলাচল করবে। বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল যৌথভাবে সেতু স্থাপনের কাজটি করেছে। ২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর—এই সময়ের মধ্যে সেতুগুলো নির্মাণ করেন তারা। লাউয়াছড়ায় এই প্রথম এ রকম সেতু স্থাপন করা হলো।
বন্য প্রাণীর চলাচলের সুবিধার্থে ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্যানোপি ব্রিজ আছে। এমন সেতু ধরে চলাচলে অভ্যস্ত হতে বন্য প্রাণীর কয়েক মাস সময় লাগে বলে গবেষক দলের সদস্যরা জানিয়েছেন।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং গবেষক দল সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেললাইন এবং শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক। এতে ভাগ হয়ে আছে উদ্যানটি। সড়ক ও রেলপথের বিভিন্ন স্থান অনেক প্রশস্ত। এতে অনেক প্রাণী এক পাশের গাছ থেকে আরেক পাশের গাছে লাফ দিয়ে যেতে পারে না। কিছু প্রাণী নিচে নেমে সড়ক ও রেলপথ পাড়ি দেয়। এভাবে সড়ক ও রেলপথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক প্রাণী মারা পড়ে। উদ্যানের দুই পাশে উল্লুকসহ বন্য প্রাণী পারাপারের সুবিধার্থে পাঁচটি সেতু তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এর চারটি রেলপথে এবং একটি সড়কপথের ওপর।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানিয়েছেন, গত বছরের নভেম্বর থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় পাঁচটি বন্য প্রাণী মারা গেছে। এর মধ্যে আছে চিত্রা হরিণ, বানর, মেছো বিড়াল, মুখপোড়া হনুমান ও চিতা বিড়াল। করোনার কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় এই সময়ে রেললাইনে বন্য প্রাণী কাটা পড়ার ঘটনা নেই। সড়কপথেও যান চলাচল কম ছিল। তবে বছরে এই দুটি পথে অর্ধশতাধিক বন্য প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সেতুগুলোর দূরত্ব ২২ থেকে ২৫ মিটার। নাইলনের মোটা রশি সড়ক ও রেলপথের দুই পাশের গাছের ডালপালার মধ্যে বেঁধে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। উল্লুকের চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য সেতুগুলোর কাছে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দিনে কয়টি উল্লুক কতবার এপার-ওপার আসা-যাওয়া করে, তা জানা যাবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুন নাহারের নেতৃত্বে ছয়জনের গবেষক দল সেতু স্থাপনের কাজটি করেছে। স্থানীয়ভাবে আরও তিনজন সহযোগিতায় ছিলেন। ২০১৯ সালের জরিপ অনুযায়ী, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪০ থেকে ৪১টি উল্লুক আছে। পরিবার আছে ১৩টি। ২০০৬ সালে ছিল ৩৫টি উল্লুক ছিল। আর ২০১৮ সালের জরিপে দেখা গেছে, সিলেট অঞ্চলের লাউয়াছড়া, আদমপুর, সাতছড়ি, রেমা-কালেঙ্গাসহ দেশের ২২টি স্থানে ৪০০টি উল্লুক আছে।
হাবিবুন নাহার বলেন, ২০১৯ সালে উল্লুকের চলাচল পর্যবেক্ষণ করেছি। অনেকবার দেখেছি পার হতে চায়। পার হতে পারে না। উল্লুক নিচে নামে না। কখনো অনেক জায়গা ঘুরে আসা-যাওয়া করে। তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়ায় উল্লুকের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। এদের সংখ্যা বাড়ছে। এক জায়গায় থাকলে প্রতিযোগিতা হবে। তাদের মুক্তভাবে ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ। যাতে সব জায়গায় যেতে পারে। প্রতিযোগিতায় না যায়। বন বিভাগের অর্থায়নে প্রাথমিকভাবে লাউয়াছড়ার পাঁচ জায়গায় কৃত্রিম গাছ সেতু স্থাপন করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি দেখি তারা ব্যবহার করে, তাহলে দেশের অন্য জায়গায়ও এ রকম সেতু করা হবে।