কমলগঞ্জ প্রতিনিধি::
কমলগঞ্জে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকাল
জন্মঃ আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মূফতী শাহ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব পিতাঃ ওলিয়ে কামিল, উস্তাদুল উলামা, আরিফ বিল্লাহ, হযরত মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোশাররফ আলী ছাহেব রহ. মাতাঃ রত্নগর্ভা মহীয়সী মোছাঃ আয়েশা বেগমের গর্ভে মৌলভীবাজার জেলা কমলগঞ্জ পৌরসভার ০৯নং ওয়ার্ডের রামপাশা গ্রাম (মোকাম বাড়ীর) এক সম্ভ্রান্ত ধার্মিক ওলি পরিবারে ১৯৬৬ সালের ১ জুলাই পবিত্র শুক্রবার তিনি এ পৃথিবীতে আগমন করেন। তাঁর পিতা তাকে মায়া করে বড় বাবা বলে ডাকতেন। তাঁর পিতা ঐতিহ্যবাহী ভানুগাছ সফাত আলী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালী উস্তাদ ও হযরত শাহ আজম রহ. দরগাহ্ শরীফের পীর ছাহেব ছিলেন। তিনি হযরত শাহ আজম রহ. দরগাহ্ জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং তিনি আরবী, উর্দু ও ফরাসী ভাষার একজন মকবুল আলেম ছিলেন।
তাঁর দাদা ওলিয়ে কামিল হযরত শাহ্ আজম রহ. তিনি একজন দেশ-বরেণ্য বুজুর্গ ছিলেন।
পিতামাতার কলিজার টুকরো, মহান পিতার ঔরসে জম্ম নেওয়া শিশু শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলেন। শৈশবেই তিনি অন্যান্য বাচ্চাদের চেয়ে বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি বিনয়ী নম্রতা, ভদ্রতা, কোমল আদবের অধিকারী ছিলেন।
প্রাথমিক শিক্ষাঃ
শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহীদ আলী আজমী তিনি প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর অত্যন্ত প্রিয় বাবা হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোশাররফ আলী ছাহেব রহ. এর নিকট থেকে মক্তবের শিক্ষা লাভ করেন।
এরপর তিনি তাদের বাড়ী পাশেই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এখান থেকে শুরু হয় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা জীবন। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় গভীর মনোযোগ ও আদব আখলাকের মাধ্যমে শিক্ষকদের মন আকর্ষণ করেন তিনি সেই ছোট্ট কাল থেকেই তিনি অত্যন্ত সুন্দর কন্ঠের অধিকারী ছিলেন। তিনি কোন প্রকার কসীদা ও গজল পরিবেশন করলে উস্তাদগন তাকে মায়া করে পুরস্কারও দিতেন।
মাধ্যমিক শিক্ষাঃ
তিনি ঐতিহ্যবাহী সফাত আলী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ১৯৮০ সনে কৃতিত্বের সাথে দাখিল পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। এরপর এই মাদ্রাসায় আলিম ক্লাসে ভর্তি হয়ে পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সাথে আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
উচ্চ শিক্ষাঃ
উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি কুমিল্লা পিপুলিয়া কামিল মাদ্রাসায় ফাজিল ক্লাসে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ফাজিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
পরবর্তীতে কুমিল্লা সোনাকান্দা কামিল মাদ্রাসায় কামিল (মুফতি) বিভাগে ভর্তি হন। এখানে পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনঃ
তিনি প্রথমে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখের মইনপুর জালালিয়া প্রস্তাবিত দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মহান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন এবং কঠোর মেহনত, পরিশ্রমের মাধ্যমে সুপারিনটেন্ট পদে কর্মজীবন শুরু করেন।
সেখানে কিছুদিন খেদমত করেন।
এরপর তাঁর সম্মানিত পিতার নির্দেশে তিনি সিলেট ওসমানী নগর উপজেলার গোয়ালাবাজার আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি চাকুরী নেন এবং তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানে ইন্তেকাল অবধি পর্যন্ত সেখানে শিক্ষকতার মহান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে কঠোর মেহনত, আল্লাহ তাআলার দয়ায় যোগ্যতা ও বিচক্ষণতার সাথে চাকুরী করেন। সেখানে অত্যান্ত সুনামের সাথে তিনি শিক্ষকতা পেশায় খেদমত করেন। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করেন। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিষয় তিনি খুবই গুরুত্ব দিতেন তিনি মনে করতেন এটা তাঁর একটা বাড়ী নিজ বাড়ীকে মানুষ যে ভাবে গুরুত্ব দিয়ে সাজায় তিনিও ঠিক সেই ভাবেই গুরুত্ব দিতেন। তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালিন উস্তাদ। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি সহ সকল শিক্ষকগনের মধ্যে আন্তরিকতার কোন প্রকার কমতি ছিল না তাই প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত সিলেট জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও সুনাম অর্জন করে।
ছাত্রদের সাথে তাঁর সম্পর্কঃ
তিনি তার প্রতিষ্ঠানের সকল ছোট বড় ছাত্রদেরকে বাবা বলে ডাকতেন এবং মাথায় হাত বুলিয়ে সব সময়ই তাদের জন্য তিনি দোয়া করতেন। এবং প্রতিষ্ঠানের অবিভাবকদের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক ও ছিল। প্রতিষ্ঠানের এতিম, অসচ্ছল ছাত্র ছাত্রীদেরকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। যেমন বই, খাতা, কলম, ড্রেসের কাপড়, মাসিক বেতন, ভর্তিতে তিনি সুপারিশ ও সহযোগিতা করতেন। ছাত্ররাও তাদের প্রাণ প্রিয় উস্তাদকে খুবই সম্মান শ্রদ্ধা করত। তারা তাদের উস্তাদকে মুখ ভরে ডাকত মাওলানা স্যার। উস্তাদ ও ছাত্রদের মাঝে যে সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা দরকার সেটাই ছিল। সব সময় অসহায় অস্বচ্ছল ছাত্র ছাত্রীদেরকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় এই মনোভাব নিয়ে তিনি সব সময় কাজ করতেন।
সিলেট গোয়ালাবাজারের মানুষের মায়াঃ
সিলেটর ওসমানীনগর উপজেলায় অধিকাংশ এলাকায় ওলিয়ে কামিল হযরত শাহ্ আজম রহ. এর আশিকান মুরিদীন মুহিব্বিন ভক্তবৃন্দ আছেন এবং নিজ কর্মস্থল তার কারণে তিনি গোয়ালাবাজারের প্রতিটি মানুষের সাথে তার আত্মার সম্পর্ক ছিল। তাঁর মুখের প্রাঞ্জল ভাষা ও আচার-আচরণ ব্যবহার দিয়ে তিনি প্রতিটি মানুষের মন জয় করেছিলেন। গোয়ালাবাজারের মানুষও তাকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসতেন। কর্ম ভালো হলে তার ফলও ভালো হয়। এটাই সত্য।
হযরত শাহ্ আজম রহ. দরগাহ্ শরীফের গদ্দীনিশিন ছিলেনঃ
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মূফতী শাহ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ. তিনি তাঁর সম্মানিত পিতা হযরত মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোশাররফ আলী ছাহেব রহ. এর ইন্তেকালের পরে তিনি তরিকতের খেদমতের আনজাম দেন। তিনি হযরত শাহ আজম রহ. দরগাহ্ শরীফের গদ্দীনিশিন ছিলেন। হযরত শাহ্ আজম রহ. দরগাহ্ শরীফের (এক্স) সাধারণ সম্পাদক ও ছিলেন।
তাঁর এবাদত বন্দেগী ও তাকওয়াঃ
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মূফতী শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ. ছিলেন একজন আল্লাহ ওয়ালা তাকওয়াবান বান্দা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের প্রতি ছিল তাঁর মনের মহব্বত । জীবনে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ১ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়েন নি। নামাজের প্রতি তিনি অত্যন্ত যত্নশীল ও দায়িত্ববান ছিলেন। এবং মানুষের হক আদায়ে তিনি গুরুত্ব দিতেন। কেউ যেন কোন কষ্ট না পায় সেদিকে নজর রাখতেন। কৃত্রিমতা লৌকিকতা তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মূফতী শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ. খুবই নম্র ও ভদ্র গুনের অধিকারী ছিলেন, তিনি সহজেই কাউকে ক্ষমা করে দিতেন। এমনকি তাঁর সাথে কেউ চরম জঘন্য বেয়াদবী ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করলেও তিনি তাকে মাফ করে দিতেন। এমনকি দৃষ্টিকটু ভাষা কাউকে কিছু বলেননি কাউকে কিছু বলতে হলে পরামর্শের মাধ্যম কাজটি বুঝিয়ে দিতেন।
তিনি অত্যন্ত সুললিত কন্ঠে, কায়মনো বাক্যে দোয়া ও মোনাজাত করতেন। তাঁর মোনাজাতের শব্দ চয়ন শ্রুতি মাধুর্য আকর্ষণীয় ছিল শক্ত অন্তর হলেও মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিত।
বাইয়াত ও ইজাযতঃ
আলহাজ্ব হজরত মাওলানা মূফতী শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ. তিনি তাঁর সম্মানিত পিতা ওলিয়ে কামিল হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোশাররফ আলী ছাহেব রহ. এর নিকট থেকেই তিনি তাসাউফের শিক্ষা গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তিনি বাইয়াত গ্রহণ করেন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা কাজী রফিক আহমদ নকশাবন্দী এর নিকট। তিনি নিজেও ইসলাহি মেহনত করেন।
মসজিদের খেদমতঃ
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মূফতী শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ. দ্বীনি খেদমতের একজন প্রাণপুরুষ ছিলেন। তিনি হযরত শাহ্ আজম রহ. দরগাহ্ জামে মসজিদের ইমাম, খতিবের (আংশিক) দায়িত্ব ও আনজাম দেন। এবং মসজিদের প্রতিষ্ঠা থেকে মসজিদের সংরক্ষণ ও সংস্করণে নিজেই কঠোর পরিশ্রম করেন। মসজিদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ফান্ড কালেকশন করে মসজিদের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এই মসজিদের জন্য তাঁর মনে টান ছিল অন্যরকম দেশ ও প্রবাসে থাকা তাঁদের ভক্তবৃন্দ ও ছাত্রদের নিকট থেকে তিনি সাহায্য সহযোগিতা আনতেন এবং পরর্বতীতে ঐ দান গুলো মসজিদের উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যয় করতেন। তিনি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
হযরত শাহ আজম রহ. হিফজুল কুরআন দরগাহ্ মডেল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাঃ
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ. এর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি তাঁর এলাকায় (রামপাশা আংশিক) গ্রামে নিজের দাদা ওলিয়ে কামিল হযরত শাহ্ আজম রহ. মাজার শরীফ সংলগ্নে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর দাদাছাহেবের নামানুসারে হযরত শাহ্ আজম রহ. হিফজুল কোরআন দরগাহ্ মডেল মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসায় এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ছাত্ররা এসে পড়াশোনা করেন। এবং ইন্তেকালের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এই মাদ্রাসার পরিচালকের দায়িত্ব আনজাম দেন। তাঁর ইন্তেকালের পরে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে তিনি মাদ্রাসার আমৃত্যু পরিচালকের পদে সমাসীন থাকবেন। কারণ তিনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি তিলে তিলে অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছেন যার কারণে আজ দিনরাত ২৪ ঘন্টা কোরআনের তেলাওয়াত চলছে। হাফিজি মাদ্রাসার কারণে যাতে ঘরে ঘরে ১জন বাচ্চা কোরআনের হাফেজ হয় এটাই উদ্দেশ্য। তিনি যদি কঠিন পরিশ্রম না করতেন তাহলে এলাকায় এরকম এত সুন্দর মনোরম পরিবেশে পবিত্র কোরআনের বাগান তৈরি হত না। মাদ্রাসার কারণেই এলাকার সৌন্দর্য অন্যরকম হয়েছে। তাই তিনি আজীবন পরিচালকের দায়িত্বে থাকবেন।
হযরত শাহ আজম রহ দরগাহ্ ফাউন্ডেশনের সভাপতিঃ
মানবতার কল্যাণে অসহায় এতিম অস্বচ্ছলদের জন্য গঠন করা হয় হযরত শাহ্ আজম রহ. দরগাহ্ ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের সভাপতি ছিলেন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী শাহ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ.। এই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় তাঁরই তত্ত্বাবধানে টিন, সিমেন্ট, ইট, রড, টিউবওয়েল, ঘরের পিলার, ফ্যান, গরু, ছাগল, নগদ টাকা কাপড় সহ বিভিন্ন আসবাব পত্র প্রদান করা হত।
পবিত্র হজ্জে গমনঃ
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ. ইন্তেকালের কয়েক মাস আগে পবিত্র হজ্জ সম্পাদন করেন। (১০ জুন ২০২৩ ইংরেজি) পবিত্র মক্কাতুল মোকাররমা ও মদিনাতুল মুনাওয়ারা শরীফ জিয়ারত করেন। হজ্জের বিভিন্ন কার্যাদির সম্পাদনের জন্য তিনি পবিত্র মদিনা শরীফে ৪৫ দিন অবস্থান করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা শরীফ জিয়ারত সহ হজ্জের সকল হুকুম আহকাম মেনে হজ্জের কার্যাবলী সম্পাদন করেন। আল্লাহতায়ালা যেন তাঁর হজ্জকে মাবরুর মকবুল হজ্জ্ব হিসাবে কবুল করেন।
জীবনী রচনাঃ
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মূফতী শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ. ইন্তেকালের পূর্বে তিনি বহু কষ্ট করে তাঁর দাদা ছাহেব পীরে কামিল হযরত শাহ্ আজম রহ. জীবন কর্ম ও কারামত নিয়ে ৩/৪ বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় সরাসরি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। এবং পান্ডুলিপিও করেন। তিনি হায়াতের জিবনে এই বই প্রকাশের সুযোগ পাননি। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত একজন শিক্ষক এই পান্ডুলিপির কাজ করছেন। কিন্তু তিনি তাঁর হায়াতের দৌড়ে আল্লাহ তাআলা তাকে এই বইটি প্রকাশ করার সময় দেন নি। কিন্তু তাহার খুব ইচ্ছা ছিল তাঁর দাদার জীবনী সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ করার কিন্তু শেষ আশা পূরণ হলো না। আশা থেকেই গেল। জীবনীর কাজ চলছে আল্লাহ তাআলা তাওফিক দিলে জীবনী প্রকাশিত হবে। ইনশাআল্লাহ।
পারিবারিক ও সাংসারিক জীবনঃ
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী শাহ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ.
১লা মার্চ ১৯৯২ সনে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ছকাপন চৌধুরী পরিবারে মৃত মোঃ আবদুল গফুর চৌধুরীর ২য় কন্যা মোছাম্মাৎ রাবেয়া আক্তারের বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। সাংসারিক জীবনে তাহার ১ ছেলে ও ৩ মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলে সবার বড়। একমাত্র বড় ছেলে ঢাকা দারুন নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে মাস্টার্স (কামিল) সম্পন্ন করেছেন। তিনি বর্তমানে কুমিল্লার একটি মাদ্রাসায় সুপারেনটেনডেন্ট পদে ও মসজিদের খতিবের দায়িত্বে আছেন।
মাবুদের সান্নিধ্যেঃ
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ. তিনি শারীরিক ভাবে তেমন একটা অসুস্থ ছিলেন না। যেদিন তিনি ইন্তেকাল করেন ঐদিন যোহরের নামাজ আদায় করেন এবং পেটে কিছু ব্যাথা অনুভব করেন, নিজে নিজে দুইবার বাথরুমে হাজতের জন্য যান। হাজত শেষ করে বিছানায় আসেন তখনই শরীরে খুবই অশান্তি ও অস্বস্তিকর বোধ করেন। তখন তাঁর সম্মানিত আম্মাজান উনার কাছে বসা আছেন দোয়া করতেছেন কাঁদতেছেন কি যে হৃদয় বিদারক ঘটনা। তখন তিনি নিজেই বিছানায় নিজেই শুয়ে যান তখন বিকাল ৪টা বাজে। ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ইংরেজী রোজ মঙ্গলবার বিকাল ৪.১০ মিনিটের সময় তিনি আমাদের সকলকে ছেড়ে মহান আল্লাহ তাআলার ডাকে সাড়া দিয়ে এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেন। ইন্তেকালের সময় হযরতের বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। রাব্বে কারিম যেন এই ক্ষণজন্মা মহান ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা যেন অনন্তকাল জান্নাতুল ফেরদাউসের সুউচ্চ স্থানে রাখেন। আমিন
জানাযা ও দাফনঃ
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী শাহ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ. ইন্তেকালে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লেই সিলটসহ সারা দেশ ও প্রবাসে শোকের ছায়া নেমে আসে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পরে এক শোক সংবাদ প্রচার হতে থাকে। ইন্তেকালের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে সাথে সাথে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাঁর মরিদ্দিন মুহিব্বিন ভক্তবৃন্দ, সহকর্মীবৃন্দ, ছাত্র, শুভাকাঙ্ক্ষীগনের আগমন ঘটতে থাকে। বিকাল ২.৩০ মিনিটে হযরত শাহ্ আজম রহ. দরগাহ্ শরীফ সংলগ্ন মাঠে তাঁর বিশাল জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজের ইমামতি করেন তাঁর ছোট ভাই মুফতি মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোজাহিদ আলী আজমী। তাঁর জানাজার নামাজে হযরত শাহ আজম রহ. এর মুরিদিন, মুহিব্বিন মোতায়াল্লিকিন, সহকর্মী বৃন্দ, রাজনীতিবিদ জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, ছাত্র বৃন্দ এলাকার সর্বস্তরের মুসল্লিয়ানে কেরামগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে জানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করেন। পরিশেষে তাঁর দাদার স্মৃতি বিজড়িত হযরত শাহ আজম রহ. দরগাহ্ জামে মসজিদের পাশেই তাঁকে কবরস্থ করা হয়।
লেখকঃ মুজাহিদ আজমী